“গ্লোবাল ভিলেজ” শব্দটি প্রথম জনপ্রিয়তা পায় কানাডিয়ান অধ্যাপক মার্শাল ম্যাকলুহান-এর মাধ্যমে। এটি এমন একটি ধারণা যা বোঝায়—বিশ্ব এখন এতটাই সংযুক্ত এবং ঘনিষ্ঠ যে এটি যেন একটি ছোট্ট গ্রামের মতো হয়ে গেছে। প্রযুক্তি, বিশেষ করে ইন্টারনেট, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমের বিস্ময়কর উন্নতির কারণে এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।
🌍 ICT ও গ্লোবাল ভিলেজের সম্পর্ক
গ্লোবাল ভিলেজ-এর বৈশিষ্ট্য:
গ্লোবাল ভিলেজ ধারণাটি আমাদের আধুনিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে। নিচে এর কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:
-
টেলি ও ভিডিও কনফারেন্স: দূরে বসে অফিসিয়াল মিটিং, আন্তর্জাতিক সেমিনার বা শিক্ষাপ্রদান সম্ভব হয়েছে Zoom, Google Meet বা Microsoft Teams-এর মাধ্যমে।
-
ভার্চুয়াল বা ই-এডুকেশন: শিক্ষার্থীরা এখন অনলাইনে কোর্স করতে পারে, সার্টিফিকেট পেতে পারে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও অর্জন করতে পারে ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের মাধ্যমে।
-
টেলিমেডিসিন: দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষ ডাক্তারদের সঙ্গে ভিডিও কলে পরামর্শ করতে পারছে। এতে সময় ও ব্যয় দুই-ই সাশ্রয় হচ্ছে।
-
হোম অটোমেশন: স্মার্ট হোম প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন ঘরের আলো, ফ্যান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় মোবাইল বা ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে।
-
ই-কমার্স ও এম-কমার্স: অনলাইন শপিং যেমন Amazon বা Daraz-এর মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা সম্ভব হয়েছে, এবং মোবাইলের মাধ্যমে কেনাকাটাকে আরও সহজ করেছে এম-কমার্স।
📚 HSC ICT পাঠ্যবই অনুযায়ী গ্লোবাল ভিলেজ
HSC ICT বইয়ের অধ্যায়: “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশ্ব” অংশে গ্লোবাল ভিলেজ সম্পর্কে বলা হয়েছে:
“তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে দূরত্ব অতিক্রম করে পৃথিবীর মানুষ একে অপরের আরও কাছাকাছি এসেছে। এই ধারা গ্লোবাল ভিলেজ ধারণার জন্ম দিয়েছে।”
-
অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং: ব্যাংকে না গিয়ে অর্থ লেনদেন, বিল পরিশোধ, হিসাব যাচাই ইত্যাদি এখন ঘরে বসেই সম্ভব।
-
অনলাইন মার্কেটিং ও ই-বিজনেস: পণ্যের প্রচার, বিক্রি এবং ব্যবসা পরিচালনা এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে হচ্ছে, যা ছোট ব্যবসার জন্যও বিশাল সুযোগ তৈরি করছে।
-
ই-গভর্নিং: নাগরিক সেবা এখন অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে, যেমন জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট আবেদন, ভূমি তথ্য ইত্যাদি।
-
ই-গবেষণা ও ই-অফিস: গবেষণা ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যা কাজের গতি বাড়িয়েছে।
-
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR): বাস্তবতার অনুভব তৈরি করে এমন প্রযুক্তি, যা শিক্ষা, বিনোদন ও প্রশিক্ষণ খাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
📊 ICT ও গ্লোবাল ভিলেজ: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশেও “ডিজিটাল বাংলাদেশ” কর্মসূচির মাধ্যমে গ্লোবাল ভিলেজের বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে:
-
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (UDC)
-
অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম
-
বিস্তৃত ই-গভর্নেন্স
🧠 শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের করণীয়
-
গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে নিজেকে উপস্থাপন করতে ইংরেজি ও ICT দক্ষতা অর্জন করা
-
অনলাইন রিসোর্স থেকে শিক্ষা গ্রহণ
-
প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি
-
ডিজিটাল সিকিউরিটি বিষয়ে সচেতনতা
উপসংহার:
গ্লোবাল ভিলেজ একটি যুগান্তকারী ধারণা, যা আমাদের পৃথিবীকে ছোট করে দিয়েছে মানসিকভাবে, তথ্যগতভাবে এবং প্রযুক্তিগতভাবে। তবে এর সুযোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে যাতে এই ‘গ্রাম’টি ভারসাম্যপূর্ণ, ন্যায্য ও টেকসই হয়।